যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন: বাংলাদেশে গত বছর নাটকীয়ভাবে কমে এসেছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড - মানবাধিকার বার্তা

Breaking

Breaking News

Comments

বুধবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৩

যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন: বাংলাদেশে গত বছর নাটকীয়ভাবে কমে এসেছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড

মানবাধিকার বার্তাঃ বাংলাদেশে ২০২২ সালে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা তার আগের বছরের তুলনায় ‘নাটকীয়ভাবে’ কমে এসেছে বলে জানিয়েছে সোমবার প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈশ্বিক মানবাধিকার প্রতিবেদন। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২১ সালে বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ৮০ জন, যেখানে গত বছর এই সংখ্যা নেমে আসে ২৫ এ। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কমে আসার কারণ হিসেবে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের (র‍্যাব) ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপকে উল্লেখযোগ্য কারণ বলে এর আগে চিহ্নিত করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা। তবে বাংলাদেশে গুমের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। বাংলাদেশে গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তির পরিবারগুলোর সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ এবং কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের গত মে মাসে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে। সেই বিবৃতির উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “যুক্তরাষ্ট্র সরকার র‌্যাব কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরও গুমের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে।” “নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারগুলো ঘন ঘন হুমকি পেয়েছে। রাজনৈতিক বিরোধীদের অভিযোগ, পুলিশ বাহিনী জোরপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের অভিযোগ নথিভুক্ত করেনি,” উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। মানবাধিকার সংগঠন এবং গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বলেছে, “একটি স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ১৬ জন মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন। এই ধরনের কাজ প্রতিরোধ, তদন্ত বা শাস্তি দেওয়ার জন্য সরকারি প্রচেষ্টা সীমিত।” এতে আরও বলা হয়, “সুশীল সমাজের সংগঠনগুলো জানিয়েছে, গুমের শিকার বেশিরভাগই বিরোধী দলীয় নেতা, কর্মী এবং ভিন্ন মত পোষণকারী।” প্রতিবেদনে ব্যবহার করা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী ওই বছরে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয় ৮০ ব্যক্তি। ২০২২ সালে তা কমে ১৯ জনে নেমে আসে। এর কারণ হিসেবে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি তুলে ধরছেন বাংলাদেশের অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। নাম উল্লেখ না করে এতে বলা হয় অন্য একটি মানবাধিকার সংস্থার হিসাব মতে, ২০২২ সালের প্রথম নয় মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ২৫ জন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদন মতে, বাংলাদেশে ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৬০০’র বেশি মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যুরো অব ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস এবং লেবার কর্তৃক প্রকাশিত বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সংক্রান্ত ‘২০২২ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস’ শিরোনামে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ অংশে বলা হয়েছে, “সরকার কর্তৃক বিচারবহির্ভূত হত্যা, বেআইনি বা নির্বিচারে হত্যা, গুম, নির্যাতন বা নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণ বা শাস্তির মতো মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন রয়েছে।” যদিও র‌্যাব সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে না ঘাবড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী ১৯ মার্চ রাজধানীর কুর্মিটোলায় র‌্যাব সদর দফতরে র‌্যাবের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক প্রতিনিধি দল সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সফরের সময় র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রসঙ্গ উঠলেও তারা এ বিষয়ে কোনো আশ্বাস দেননি। সোমবার বৈশ্বিক মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন বলেছেন, “মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা শুরু হয়েছে ‘সর্বজনীন’ শব্দটি দিয়ে। কারণ বিশ্বের দেশগুলো সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে কিছু নির্দিষ্ট অধিকার রয়েছে যা বিশ্বের প্রতিটি মানুষ, সর্বত্র ভোগ করার অধিকার রাখেন।” “যুক্তরাষ্ট্র সেসব অধিকার রক্ষায় বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার ও স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামী মানুষের পাশে থেকে সব সময় সমর্থন করে যাবে,” প্রতিবেদনে বলা হয়। প্রতিবেদনে যা আছে প্রতিবেদনে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে—নির্বিচারে গ্রেপ্তার বা আটক, রাজনৈতিক কারণে গ্রেপ্তার, অন্য দেশে অবস্থিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক দমন, ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ওপর স্বেচ্ছাচারী বা বেআইনি হস্তক্ষেপ, কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তির অপরাধের জন্য তার স্বজন ও পরিবারের সদস্যদের শাস্তি দেওয়া, মতপ্রকাশ সীমিত করার জন্য সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বা সহিংসতার হুমকি; সাংবাদিকদের অযৌক্তিক গ্রেপ্তার বা বিচার, ফৌজদারি মানহানি আইন বলবৎকরণ বা হুমকিসহ স্বাধীন মতপ্রকাশের এবং মিডিয়ার ওপর গুরুতর বিধি-নিষেধ। এতে আরও বলা হয় “ইন্টারনেট স্বাধীনতার ওপর গুরুতর নিষেধাজ্ঞা; সংগঠন করা বা সংগঠিত হওয়া এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে গুরুতর হস্তক্ষেপ; বেসরকারি সংস্থা এবং সুশীল সমাজ সংস্থাগুলোর পরিচালনা ও তহবিল সংগ্রহের ওপর অত্যধিক আইনগত সীমাবদ্ধতা আরোপ; শরণার্থীদের চলাফেরার স্বাধীনতার ওপর বিধি-নিষেধ; রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ওপর গুরুতর এবং অযৌক্তিক বিধি-নিষেধ; গুরুতর সরকারি দুর্নীতি; অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ওপর গুরুতর সরকারি বিধি-নিষেধ বা হয়রানি; যৌন সহিংসতা, কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা, জোরপূর্বক বিয়েসহ বিভিন্ন রকম লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ক্ষেত্রে যথাযথ তদন্ত ও জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে।” “জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠী বা আদিবাসীদের ওপর সন্ত্রাস, সহিংসতা ও হুমকি; সমকামী ও উভকামী মানুষদের বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং তাদের পারস্পরিক সম্মতিপূর্ণ যৌন আচরণকে অপরাধী সাব্যস্ত করে আইন; স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়ন এবং শ্রমিকদের সংগঠনের স্বাধীনতার ওপর উল্লেখযোগ্য বিধি-নিষেধ এবং শিশু শ্রমের সবচেয়ে খারাপ রূপের অস্তিত্ব রয়েছে,” প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Recent in Sports

Most Popular

Tags